স্টাফ রিপোর্টার:
অনলাইন জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ছে যুব ও তরুণ সমাজ। এ থেকে বাদ যাচ্ছে না রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও। যে কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় প্রকাশ্যে জুয়া-হাউজি খেলা এলাকায় দেখা না গেলেও ডিজিটাল পদ্ধতির অপব্যবহার করে এন্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে জমজমাট হয়ে উঠেছে অনলাইন জুয়ার আসর। অনলাইন জুয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন অ্যাপস।
অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খেলা যায় এই জুয়া। জেলার স্কুল-কলেজের ছাত্র, বেকার যুবক ও তরুণ শিক্ষার্থীরা এসব খেলায় জড়িয়ে যাচ্ছে। তরুণদের অনেকেই কৌতূহলবশত খেলা শুরু করার পরই আসক্ত হয়ে পড়ছেন এই অনলাইন জুয়ায়। দেখা গেছে, অনলাইন জুয়ায় সব থেকে বেশি খেলে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এপের নিয়ম সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকে পড়ছে অনলাইন জুয়ার দিকে। সাতক্ষীরায় গুটিকতক জুয়াড়ীর মাধ্যমে অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রিত হয়।
এদের মধ্যে শাহিনুর রহমান প্রথম সারির জুয়াড়ী। মাত্র এক-দেড় বছর আগেও এই শাহিনুর ইটের ভাটায় কাজ করতো, নদীতে জাল টেনে মাছ ধরতো। সেই শাহিনুর এখন শহরে অঢেল সম্পত্তির মালিক। শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেঁকি বাজার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা এই শাহিনুর। পিতার নাম আবু সাইদ। তার বর্তমান বাড়ী রসুলপুরে। শহরের তুফান কোম্পানীর মোড় তথা সঙ্গীতা মোড়ে রয়েছে ‘মোবাইল শপ’ নামে নামমাত্র মোবাইলের দোকান। মোবাইল কেনা-বেচা না হলেও লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দোকানে বসেই নিয়ন্ত্রণ করে জেলার অনলাইন জুয়ার বোর্ড। অনলাইন জুয়া পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তার রয়েছে একটি বাহিনী। যাদের কাজ সর্বক্ষণ অনলাইনে থেকে এলাকাভিত্তিক জুয়ার আসর পরিচালনা করা। তাদের মধ্যে- সাগর, ইমরান, আসাদুল, সেলিম ও সোহেল অন্যতম। অনলাইন জুয়ায় আসক্ত কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, লাভের আশায় প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছে জেলার হাজার হাজার তরুন যুবক। অনলাইন জুয়ার ফাঁদে ফেলে এই চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ চক্রের সদস্যরা সেলসম্যান বা রিসেলার নামে পরিচিত। দিনমজুর, ট্রলি চালক, সাধারণ শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ীসহ স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে লোভনীয় অফার দিয়ে তাদের জালে আটকে ফেলে। সূত্রে জানা যায়, জেলার পৌর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ড এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও ঢুকে পড়েছে গেম নামের এই অনলাইন জুয়া। যুবক-তরুণ সমাজ অন্যান্য নেশা ছেড়ে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটে জুয়ার মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের টাকা হারাচ্ছেন। জানা গেছে, অনলাইন ভিত্তিক লুডু, ক্যারাম, তরুণদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় হালের পাবজি গেম, ফ্রি-ফায়ারসহ শতাধিক গেমে আসক্ত কিশোর-কিশোরীরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার হাজার হাজার তরুন বিশেষ করে যুব সমাজ এমনকি রাজমিস্ত্রি, চায়ের দোকানদার, মুদি দোকানদার, সেলুনকর্মীরাও খেলছে অনলাইন জুয়া। আর যারা একবার এই জুয়া খেলেছে তারা খেলেই যাচ্ছে। যারা খেলা দেখছে, তারাও লোভে পড়ে কোনো না কোনো সময়ে খেলা শুরু করছে। মোবাইলে গেম খেলার ছলে অনেক শিক্ষার্থীই এখন জুয়া খেলছে। কেউ দেখলে মনে করবে মোবাইলে গেম খেলছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখেন, যাদের হাতে মোবাইল আছে, হোক নদীর ধারে, বাঁশবাগানে, আমবাগানে, বাসায়, রাস্তার ধারের দোকানের বেঞ্চে, স্কুলের পুরোনো ভবনে কিংবা সেলুনের দোকানে- অধিকাংশই এই বাজি এপে জুয়া খেলছে।
এদিকে, শহরে বিশেষ করে সঙ্গীতা মোড় সংলগ্ন শাহিনুরের হাত ধরে যে খেলাটি বেশী জনপ্রিয় সেটির নাম ‘তিন পাট্টি গোল্ড’। এপটি মোবাইল ফোনে নামিয়ে জিমেইল আইডি ও ফোন নম্বর দিয়ে আইডি খুললেই ঢোকা যায় অনলাইন জুয়ার দুনিয়ায়। যে একাউন্ট খোলা হলো, তাতে বিকাশ, নগদ বা রকেটের মাধ্যমে টাকা ঢুকিয়ে শুরু করা যায় বাজি খেলা বা জুয়া খেলা। শহরের এক কলেজ ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অনলাইন জুয়া খুবই লোভনীয় আর আকর্ষণের খেলা।
পড়াশোনা ও কাজকর্ম বাদ দিয়ে সব সময় মোবাইল নিয়ে অনলাইন জুয়ায় ডুবে থাকছে অনেক শিক্ষার্থী। তবে, অনলাইন জুয়ায় রসুলপুরের এই শাহিনুর অল্প সময়ে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হলেও অধিকাংশ হয়েছে সর্বস্বান্ত। অনেকে এ খেলায় বার বার হেরে পকেটে বাজি লাগানোর মতো টাকা থাকে না। এ অবস্থায় অনেকে বাধ্য হয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অপরাধজনিত কাজে লিপ্ত হচ্ছে। সকল বিষয়ে চিন্তা করে এখনই এব্যপারে ব্যবস্থা না নিলে জেলাব্যাপী আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করছেন জেলার সচেতন নাগরিকরা। যুবসমাজকে রক্ষা করতে সচেতনমহল অনলাইন জুয়ার এই আসর ভেঙে দিয়ে মূলহোতাদের আইনের আওতায় আনতে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Leave a Reply