সরদার জিল্লুর, কলারোয়া:
কলারোয়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এসে ভর্তি না হয়ে বাড়িতে ফিরে যাওয়া সালেহা (৬০) নামের সেই নারীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের বাড়িতে তিনি মারা যান। তিনি ওই গ্রামের পেশায় ভ্যান চালক বাবর আলীর স্ত্রী।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে কলারোয়া হাসপাতালে আসেন বোয়ালিয়া গ্রামের পেশায় ভ্যান চালক বাবর আলীর স্ত্রী সালেহা। রোগীর অবস্থা খুব একটা ভাল না হওয়ার কারণে কালক্ষেপণ না করে তাৎক্ষনিক তাকে হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সে করে জেলার করোনার জন্য নির্ধারিত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে ভর্তি না হয়ে রোগীসহ তার স্বজনেরা ওই এ্যাম্বুলেন্সেই আবারো কলারোয়ায় ফিরে এসে বোয়ালিয়ায় বাড়িতে চলে যায়।
মঙ্গলবার (১২মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কেঁড়াগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিলের সাথে কথা হলে তিঁনি জানান- ‘ওই মহিলা দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তার ক্যান্সার ছিলো। বিকেলে মারা যাওয়ার পর রাতে তার দাফন করা হবে।’
তিঁনি আরো বলেন- ‘মহিলা করোনা উপসর্গের কথাটি ভুল।’
ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান ভুট্টোলাল গাইন বলেন- ‘মঙ্গলবার শেষ বিকেলে ওই মহিলা মারা গেছেন। তিনি অসুস্থ ছিলেন। পরিবারটি খুব অসহায়।’
কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচ এন্ড এফপিও) ডা. জিয়াউর রহমান জানান- ‘মৃতের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।’
তিঁনি আরো বলেন- ‘রোগী ১২বছর যাবত ব্রেন টিউমারে ভুগছিলেন।’
এদিকে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গেছে, ওই রোগীর করোনা উপসর্গ পাওয়া যায়নি। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে শ্বাস কষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল থেকে ফিরে ফের বাড়িতে চলে যান সালেহা (৬০) নামের ওই নারী।
দুপুরে কলারোয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন- ‘মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন বোয়ালিয়া গ্রামের পেশায় ভ্যান চালক বাবর আলীর স্ত্রী সালেহা। রোগীর অবস্থা খুব একটা ভাল না হওয়ার কারণে কালক্ষেপণ না করে তাৎক্ষনিক তাকে হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সে করে জেলার করোনার জন্য নির্ধারিত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।’
কিন্তু সাতক্ষীরা মেডিকেলে গেলেও সেখানে ভর্তি না হয়ে অজ্ঞাত কারণে রোগী সালেহাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন তার সাথে যাওয়া স্বজনরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কলারোয়া হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার শিমুল হোসেন।
চালক শিমুল হোসেন জানান- ‘সাতক্ষীরা মেডিকেলে ভর্তি হলে সেখানে রাত্রিযাপন করতে হবে বিধায় রোগী সালেহার স্বজনেরা তাকে সেখানে ভর্তি না করে চলে এসেছেন।’
তিনি বলেন- ‘আমি তাদের সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌছে দিয়ে কলারোয়া ফিরে আসছিলাম। তখন রোগির স্বজনদের অনুরোধে বাধ্য হয়ে আবারো তাদেরকে এ্যাম্বুলেন্সে করে ফিরিয়ে আনলে তারা কলারোয়া কোল্ড স্টোরেজ মোড়ে নেমে যান।’
এ ব্যাপারে দুপুরে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচ এন্ড এফপিও) ডা. জিয়াউর রহমান জানিয়েছিলেন- ‘আমাদের হাসপাতাল থেকে পাঠানো রোগী সালেহা সাতক্ষীরা মেডিকেলে গিয়ে সেখানে ভর্তি হবে না বলে জানায় সাথে যাওয়া রোগীর স্বজনেরা। আমি ওই রোগীকে আমার হাসাপাতালের এ্যাম্বুলেন্সে বিনা পয়সায় সাতক্ষীরা মেডিকেলে পাঠিয়েছিলাম। তারা সাতক্ষীরা মেডিকেল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসার সময় হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সে কলারোয়া কোল্ড স্টোরের মোড়ে নেমে তাদের গ্রামের বাড়ী বোয়ালিয়াতে চলে গেছে বলে ড্রাইভার আমাকে জানিয়েছে।’
তখন অসুস্থ্য সালেহার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিলের সাথে কথা হলে তিনি জানিয়েছিলেন- ‘সালেহা গতরাতে (সোমবার) কয়েকবার বমি করেছেন বলে শুনেছি। মঙ্গলবার সকাল থেকে তীব্র শ্বাস কষ্টে ভুগছিল।’
তিনি আরো বলেন- ‘ওই বাড়ীর আশেপাশে কোন লোক ঢাকা, নারায়নগঞ্জ বা ভারত থেকে আগত কিনা বা এমন কারোর সংস্পর্শে সালেহা গেছেন বলে আমার মনে হয় না।’
Leave a Reply